ঢাকা,মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

সেই আলোচিত গুডভিবে কটেজটির অনুমোদন ছিলনা মতবিনিময় সভায় এসপি জিল্লুর রহমান

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::  অস্ট্রেলিয়ান তরুণি ধর্ষণ প্রচেষ্টাস্থল হিমছড়ি করাচিপাড়ার ‘গুডভিবে’ নামক কটেজটির কোন ধরনের অনুমোদন ছিলো না। শামীমুল হক ওরফে স্যাম নামের এক ব্যক্তি অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে। প্রশাসনিক অবগতি দূরের কথা, সেখানে চলাচলের পথও নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশী পর্যটক নিয়ে আসতো আলোচিত কটেজে। অন্ধকার জগতের কটেজটিতে ঘটনার কারণে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। ফলে পর্যটন খাতের মাধ্যমে বিদেশী অর্থ আসাও আগের তুলনায় কমে যাবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার হোটেল , মোটেল, গেস্ট হাউজ, ট্যুর অপারেট মালিক ও প্রতিনিধিদের সাথে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ক সভায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের এসপি জিল্লুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পর্যটক ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। মুহুর্তেই ভাইরাল হয়েছে ঘটনাটি। তাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজেই পুষাবার নয়।

এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সৈকত এলাকাকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা হবে বলেও জানান এসপি জিললুর রহমান।

তিনি আরো বলেন, ইনানী, হিমছড়ি, হোটেল-মোটেল জোন এবং সৈকতের পশ্চিম অংশে জোরদার করা হবে পুলিশি ব্যবস্থা। যাতে পর্যটকদের বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের বিচরণ স্থল সুরক্ষিত থাকে। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

এসপি জিললুর বলেন, কোন কটেজে বিদেশী নাগরিক রাতযাপন করলে পুলিশকে জানাতে হয়। কিন্তু গুডভিভেসহ অধিকাংশ কটেজই এই নিয়ম মেনে চলছে না। এসব কটেজে অভ্যন্তরিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। পর্যটকের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

শহরের লাবণি পয়েন্ট সৈকত সংলগ্ন ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে অনুষ্ঠিত সভায় কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার, মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান, মারমেইড ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মাহফুজ আলম, কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইরসহ পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।

পর্যটন খাতের বিকাশে পর্যটকদের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিভিন্ন সংবাদ ও হোটেল/মোটেল/গেস্ট হাউজ/কটেজ এর মালিক/প্রতিনিধিরা।

হোটেল মোটেল মালিক সমিতির নেতা কাশেম সিকদার কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করার পরিকল্পনা কথাও তুলে ধরেন।

এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর পিন্টু কুমার রায়, সাখাওয়াত হোসাইন, ইন্সপেক্টর শাকের আহমদ, তারিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের স্বার্থে পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়কে অনেক কটেজ গড়ে উঠেছে। যেগুলোর কোন ধরনের অনুমোদন নেই।

মতবিনিময় সভায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, কক্সবাজার জেলায় বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কেউ এক গাড়ি ইট নিয়ে গেলেও কউক’র লোকজন ওই বাড়িতে যায়। কিন্তু গুডভিভে নামক একটি অবৈধ কটেজ নির্মাণ করা হলেও কউক এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

মতবিনিময় সভায় হোটেল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক সময় থানা পুলিশ বিনা কারণে তল্লাশির নামে তাদের হয়রানির কারণে পর্যটকরা বিরক্তবোধ করে। এ বিষয়ে টুরিস্ট পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তারা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, যেখানে-সেখানে যত্রতত্র কটেজ করতে দেয়া যাবেনা। মালিক, ম্যানেজার কিংবা কর্মচারীদের বিস্তারিত ডাটাবেজ প্রশাসনের হাতে জমা থাকতে হবে। না হলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। ইতোমধ্যে অনিরাপদ জায়গায় যে সমস্ত কটেজ বা আবাসিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের এসব দাবির জবাবে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিললুর রহমান জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে পর্যটক রাখলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদেশি পর্যটক থাকার মতো পরিবেশ আছে কিনা তা আমরা সার্টিফাই করবো। এরপর এ সকল স্থানে বিদেশি পর্যটক রাখতে পারবে।

বিচ্ছিন্ন কোন জায়গায় কটেজ, হোটেল ইত্যাদি আবাসিক প্রতিষ্ঠান করতে দেয়া হবে না।

আমরা পর্যটনের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে চাই। সে জন্য যা যা করার সবই করব। ব্যবসায়িক অবকাঠামো করার আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার আরো বলেন, কক্সবাজার পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় ও নিরাপদ স্থান এটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। শুধু পর্যটন মৌসুম নয়, সারা বছরই যাতে পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে এসে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সে বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রয়েছে।

পাঠকের মতামত: